বইঃ পাঁচটি হরর গল্প
সংকলনেঃ প্রভাতী প্রকাশন
<<<<<মোবাইল বই>>>>>রহিমার রহস্যময় বিয়ে
সংগ্রহেঃ মুকুল
বাঘ
লেখকঃ টিনটিন
প্রচণ্ড শীতে থরথর করে কাঁপছে রতন। গায়ে চাদর আছে, পাশে বেশ বড় করে আগুন জ্বালিয়েছে কিন্তু এতসব আয়োজন করেও মাঘ মাসের এই প্রচণ্ড শীতকে বশে আনা যাচ্ছেনা। রতন নিরালা আবাসিক এলাকার নাইট গার্ড। অল্প কিছুদিনআগে সে এই চাকরিটা নিয়েছে কিংবা বলা যায় নিতে বাধ্য হয়েছে। খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য কিছু একটা তো করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে এই চাকরিটা নিয়েছে। মোটেই সুখকর কোন চাকরিনা এটা। সারারাত ধরে ঘুমের বারোটাবাজিয়ে জেগে থাকতে তো হয়ই, তার উপর গত কিছুদিন ধরে যুক্ত হয়েছে বাঘের ভয়। গত পাঁচদিন হলো খুলনা শহরে প্রতি রাতে একটা করে লাশ পাওয়া গেছে। প্রতিটা লাশ পাওয়াগেছে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায়। যেন কোন হিংস্রজন্তু প্রচণ্ড আক্রোশে ছিঁড়ে কামড়ে একাকার করেছে লাশগুলোকে। পেপারে এনিয়ে প্রতিদিন লেখালিখি হচ্ছে। ডাক্তারদের মতে কোন মানুষের পক্ষে এভাবে হত্যা করা সম্ভব না। শুধুমাত্র বুনো কিছু হিংস্র প্রাণী, যেমন- বাঘ,সিংহ, নেকড়ে বা হায়না এইধরনের প্রাণীর পক্ষেই এভাবে হত্যা করা সম্ভব। খুলনা কেন সারা বাংলাদেশের কোন বনেই সিংহ, নেকড়ে বা হায়না নেই। কিন্তু বাঘ আছে, এই খুলনার সুন্দরবনেই। ডাক্তারদের এই মতের উপর ভিত্তি করে সারা খুলনা শহর চষে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও বাঘের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে বাঘেরপায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। হতভাগ্য লাশগুলোর আশেপাশেই বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। সুন্দরবন থেকে বিশাল ভৈরবনদী পার হয়ে খুলনা শহরে ঢোকা কোন বাঘের পক্ষে সম্ভব না। আর যদি কোনভাবে ঢুকেও থাকে তাহলে কোথায় লুকিয়ে থাকছে বাঘটা, সেটা এখন পর্যন্ত বের করাসম্ভব হয়নি। রাততো দূরেরকথা, মানুষ এখন দিনের বেলাতেও ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে। গতকাল রতন একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। চায়ের দোকানের মালিক কাদের ভাইয়ের দেশের বাড়ি সুন্দরবনের পাশেই কোন গ্রামে। সেখানে একটা গল্পপ্রচলিত আছে, সুন্দরবনের মির্জা বাড়ি এলাকায় অনেক আগে মির্জা আসাদ ওয়ালি নামে এক জমিদার বাস করতেন। একটা পোষা বাঘছিল তার। বাঘটার হিংস্রতাবাড়ানোর জন্য প্রায়ই তাকে অল্প খাবার দেয়া হত। একদিন কোনোভাবে বাঘটাখাঁচা থেকে বের হয়ে আসে।দুর্ভাগ্যক্রমে জমিদার তখন তার বাগানে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। অভুক্ত বাঘটা ক্ষুধার জ্বালায় তার মনিবকেই আক্রমণ করে বসে। । জমিদারেরভাগ্য ভালো, মারা যাননি তিনি কিন্তু গুরুতর ভাবে আহত হন। মির্জা আসাদ ওয়ালি যেদিন আহত হন, সে রাতেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। কথিত আছে এর পর থেকে প্রতি রাতে আকাশে চাঁদ উঠার পর থেকে তিনি বাঘের রূপ ধারণ করেন এবং প্রতি রাতেই একটা না একটা খুন করেন। মির্জা আসাদ ওয়ালিআহত হবার পর থেকে প্রতি রাতেই একজন করে গ্রামবাসিমায়া বাঘের আক্রমণে মারাযেতে থাকল। গ্রামের মানুষরা মায়া বাঘের ভয়েএকে একে গ্রাম ত্যাগ করতেলাগল। ধীরে ধীরে পুরো গ্রাম জনশুন্য হয়ে গেল। কথিত আছে আজও সেই মায়া বাঘ মির্জা বাড়ির আসে পাশে ঘুরে বেড়ায়। আজও সুন্দরবনের আশেপাশের গ্রামের মানুষ প্রায় রাতেই সেই মায়া বাঘের রক্তহিম করা গর্জন শুনতে পায়। কাদের ভাইয়ের মতে মির্জা আসাদ ওয়ালি রূপী সেই বাঘটা আজ প্রায় একশ বছর পর জঙ্গল ছেড়ে শহরে চলে এসেছেন। দিনের বেলায়মানুষরূপে থাকলেও রাতে তিনি বাঘের রূপ ধারণ করে একের পর এক হত্যা করে চলেছেন। রতন জানে এটা কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু বাঘতো একটা আছেই, যেটা প্রতি রাতে নির্মম ভাবে একটার পর একটা হত্যা করে চলেছে। আবার কেঁপে উঠল রতন। শীতেনা ভয়ে তা নিজেও ঠিক বুঝতে পারল না। হঠাৎ পিছনে একটা শব্দ শুনে চমকে ঘুরে তাকাল। নাইটগার্ডের ইউনিফরম পরা একজন লোক ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিরাতে দুজন করে নাইটগার্ড এই এলাকা পাহারা দেয়। এই লোকটাকে ও আগে কখনও দেখেনি। নতুন বোধহয়। লোকটা একটু হেসে রতনের পাশে এসে বসল। “নতুন নাকি? কবে জয়েন করলা”, রতন জিজ্ঞেস করল। বিদঘুটে ভাবে একটু হাসল লোকটা। “আজকেই”, বলল লোকটা। “নাম কি?” “জলিল” “ঘটনা শুনছ নাকি?”একটু উদাস ভাবে জিজ্ঞেস করল রতন। “কি ঘটনা?” চোখ দুটো সরু করে জিজ্ঞেস করল জলিল । নিজে পুরোপুরি বিশ্বাস নাকরলেও কাদের ভাইয়ের কাছেশোনা ঘটনাটা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য করে বলে গেলরতন। কিছু কথা বানিয়ে যোগ করতেও ভুললনা। গল্প বলা শেষ করে লোকটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল রতন। হিংস্র চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। “আপনি এইসব বিশ্বাস করেন”, রাগত স্বরে জিজ্ঞাসা করল সে। “বিশ্বাস না করার কিছুই নাই, অনেক আজব ঘটনা ঘটে এইদুনিয়ায়”, দার্শনিকের মত জবাব দেয় রতন, লোকটাকেভড়কে দিতে পেরে মনে মনে খুশি হয়েছে সে। ক্রূর হাসি হাসল জলিল । চোখদুটো যেন মুহূর্তের জন্য জ্বলে উঠল। “ঠিকই বলেছেন অনেক আজব ঘটনা ঘটে এই দুনিয়ায়। যে মায়া বাঘের কথা আপনি ভাবছেন সে হয়তো আপনার আশেপাশেই কোথাও ঘাপটি মেরে আছে কিংবা মানুষ রূপে আপনার সামনেই রয়েছে, আপনি হয়তো বুঝতেও পারছেন না”, ধ্বক করে জ্বলে উঠল জলিলের চোখজোড়া। ভয়ের একটা শীতল শিহরন বয়ে গেল রতনের মেরুদণ্ড বেয়ে। একটা অশুভ চিন্তা উঁকি দিচ্ছে মনের ভিতরে। সত্যি না তো কাদের ভাইয়ের কাছে শোনা ঘটনাটা? হয়তো সত্যিই কোনমায়া বাঘ আছে, হয়তো মির্জা আসাদ ওয়ালি নামে সত্যিই কারও অস্তিত্ব আছেযে শহরে এসে প্রতি রাতে নির্মম ভাবে একটার পর একটা হত্যা করছে। জলিলের দিকে তাকাল রতন। কি যেন একটা অশুভ ব্যাপার আছে লোকটার চোখদুটোতে। হঠাৎ মনের মধ্যে উঁকি দিলভয়ংকর চিন্তাটা, বুঝতে পারল কি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আছে সে। আবার জলিলের দিকে অকাল রতন। এখনও সেই ভয়ংকর হাসিটা লেগে আছে জলিলের ঠোঁটে। “তাহলে এতক্ষণে চিনতে পারলে আমি কে?”, বাজ পরল যেন লোকটার কন্ঠ থেকে। ঢোক গিলল রতন। বুঝতে পারছে কাদের ভাইয়ের কাছেশোনা গল্পটা মোটেও বানোয়াট না। কিন্তু বুঝেও আর কোন লাভ নাই, মৃত্যু ওর থেকে মাত্র দুইফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে।মধ্যরাতে কঙ্কালের সাখে।
সংগৃহিত
স্টেশনের লোহার গেটটা এক ধাক্কায় খুলে দৌড় দিলাম টিকিট কাউন্টার এর দিকে । অনেক রাত হয়ে গেছে, ট্রেন পাব কিনা জানিনা । টিকিট কাউন্টারের সামনে যেয়ে হতাশ হতে হল আমকে । বন্ধ । কিন্তু কিছু করার নাই আমার, এইখানে অপেক্ষা করা ছাড়া । একটা টুল দেখে বসে পড়লাম সেখানে । আজকে সকালেই জয়দেবপুর এসেছি একটা ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য । এম.বি.এ পাশ করেছি গতবছর । বহু জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছি । কখনই কোন রিপ্লাই আসেনি । সুতরাং কি হবে তাতো জানিই । বরাবরের মত কোন রিপ্লাই আসবেনা । কিন্তু তাও দিতে আসা, কিছুটা ফর্মালিটি আরকি । এসে পড়লাম বিপদে । ইন্টারভিউ দিতে দিতে বিকেল হয়ে গেল, সেখান থেকেগেলাম এক বন্ধুর বাসায়, সেইখান থেকে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে স্টেশনে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেল । এখন উল্লুকের মত বসে থাকাছাড়া কোন উপায় নাই । কখন ট্রেন আসবে কে জানে । বসে আছি আর মাঝে মাঝেই নিজের শরীরে জোরে থাপ্পড় বসাচ্ছি, মশা তাড়ানোর জন্য । বসে থাকতে থাকতে একটু ঝিমুনি এসে গেছিল । হঠাৎ কানের কাছে কে যেন চিৎকার করে উঠল “ পেয়ে গেছিরে” । চিৎকার শুনে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম আমি । এবার আমার চিৎকার দেওয়ার পালা । দেখলাম কিম্ভূতদর্শন দুইটা কঙ্কাল আমার সামনে দাঁড়ানো । “ কি ভেবেছিলিরে টংরা, তুইলুকিয়ে থাকলে আমরা তোকে খুঁজে পাবনা?” একটা কঙ্কাল বলে উঠল । “ টংরা কে”, বললাম আমি, ভয়ে ঘেমে উঠেছি । “কে আবার , তুই টংরা । তাড়াতাড়ি চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে যে”, বলল অন্য কঙ্কালটা । এই কঙ্কালটার আবার একটা পা নাই । “ কোথায় যাব?” “ যেন কিছু বোঝেনা, তোর আজকে বিয়ে না, তাড়াতাড়ি চল । ” । ” “ বিয়ে!”, চমকে উঠলাম আমি “কিসের বিয়ে, কার বিয়ে?”, গলা দিয়ে ফ্যাস ফ্যাস আওয়াজ বের হল । “তোর বিয়ে, বট গাছের পেতনীর সাথে । বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসলি, আর এখন কিছু বুঝতে পারছিস না?”, বলল একপায়াটা । “আমি তো মানুষ, আমার পেতনীর সাথে বিয়ে হয় কিভাবে? ”, বললাম আমি । “কে বলল তুই মানুষ, মড়া মানুষের ভিতর লুকালেই মানুষ হয়ে যায় নাকি?” “মড়া মানুষ? আরে মড়া পাচ্ছেন কোথায়, আমি তো জলজ্যান্ত মানুষ, দেখছেন না? মরলে আমি টের পেতাম না? ” খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল একপায়াটা । “ওরে, মানুষ কখন মরে তা কিসে টের পায়?” বলল সে । “সে কি তাহলে কি সত্যিই আমি মরে গেছি?” চমকে উঠলাম আমি । “হ্যারে হ্যা, তুই মরে গেছিস রে, আর আমাদের টংরা তোর পেটের মধ্যে থেকে কথাবলছে । ” চোখে পানি চলে আসল আমার । হায়, জীবনে তো ধরতে গেলে এখনও কিছুই দেখিনি । প্রেমকরিনি, নাইট ক্লাবে যাইনি । সবইতো এখনও করা বাকি । শেষ পর্যন্ত কিনা এভাবে বেরসিকের মত মরলাম? “যেতে কি হবেই?”, একটু ভয়েভয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি । “ হবে না আবার?”, ধমক দিল প্রথম ভূতটা “ তোর না গায়ে-গু হয়ে গেছে । ” “গায়ে গু আবার কি?” “মানুষের যেমন গায়ে হলুদ হয়, তেমনি আমদের হয় গায়ে গু, কিছু বুঝিস না?” বলল প্রথম কঙ্কাল টা । হায়, সব আশা বুঝি শেষ । শেষপর্যন্ত বোধহয় আমকে বট গাছের পেতনীকেই বিয়ে করতেহবে । বট গাছের পেতনী দেখতে কেমন হবে কে জানে? তবু ও একটা শেষ চেষ্টা করা যাক । “ দেখুন আমি বোধহয় মরিনি, আমকে ছেড়ে দিন”, বললাম আমি । “ কোন ভূত যখন কোন মড়ার ভিতরে ঢুকে পরে, তখন সেই মড়াটার চেহারা সেই ভূতটারমতো হয়ে যায় । দেখনা, তোর চেহারাও টংরার মতো কেমন অকুৎসিত হয়ে গেছে । ”, বলল একপায়াটা । চেহারা আমার ভালোনা, এটা ঠিক । তাই বলে এমন অপমান? আমাকে বলে অকুৎসিত? মানে কুৎসিতের চেয়েও কুৎসিত? “ দেখেন ভাল হচ্ছেনা কিন্তু । আমি কোন টংরা ফংরা না”, একটু ঝাঁঝের সাথে বললাম আমি । “তুই যে টংরা না মানুষ, তার কোন প্রমাণ দিতে পারবি?” প্রমাণ? একটু ভাবলাম আমি । “হ্যা পারব । ”, বললাম আমি । “কি প্রমাণ?” “আমি কবিতা লিখতে পারব । আপনাদের টংরা কি কবিতা লিখতে পারে?” “ কবিতা?” আবার খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসল একপায়াটা । “কবিতার নাম শুনলেও তো আমাদের টংরা অশ্বথ গাছে উঠে পালায় । ” “ব্যাস, এইতো প্রমাণ হয়ে গেল যে আমি টংরা না” খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি । “আগে প্রমাণ কর তুই কবিতালিখতে পারিস, তারপর বুঝব”,বলল প্রথম কঙ্কালটা, “তোর কবিতা কখনও ছাপা হয়েছে?” “আমার কবিতা এতটা উচ্চমানের, যে সেটা ছাপালে অন্য কবিরা আর সুযোগ পাবে না । তাই ছাপা হয়নি । একজন সম্পাদক নিজেরমুখে আমাকে একথা বলেছেন । ”গর্বের সাথে বললাম আমি । “দেখি লেখতো একটা কবিতা । আমার নাম নিয়ে একটা কবিতালেখ । ”, বলল প্রথম কঙ্কালটা । “নাম কি আপনার?” জিজ্ঞেস করলাম আমি । “কানাবেল”, বলল প্রথম কঙ্কাল টা । “আহা, নামের কি বাহার!”, মনে মনে বললাম আমি । যাই হোক ব্যাগ থেকে কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলাম কবিতালিখতে । কিছুদূর লেখার পর জিজ্ঞেসকরল কঙ্কালটা, “কিরে লেখা হল?” “হ্যা শেষ । ” “পড়তো দেখি । ” একটু গলা খাঁকারি দিয়ে পরতে শুরু করলাম আমি, “তেল আছে, টেল আছে আর আছে কদবেল, মেল আছে, জেল আছে আর আছে পাস ফেল । খুন আছে, চুন আছে আর আছে বানডেল সবচেয়ে মহান হল কঙ্কাল কানাবেল । ” “ বাহ বাহ”, আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল কানাবেল । “তাহলে প্রমাণ হলোতো যে আমি টংরা না?”, জিজ্ঞেস করলাম আমি । কি যেন বলতে যাচ্ছিল কানাবেল, কিন্তু তার আগেই চিৎকার করে উঠল একপায়াটা, “পেয়েছি পেয়েছি টংরাকে, ওই যে অশ্বথ গাছের উপরে । ” কানাবেল আর একপায়া দৌড় দিল গাছটার দিকে ।রক্তাক্ত আঙ্গুল
লেখকঃ মাহি
আমি জানি এখন আমার তৃতীয় আঙ্গুলটি কাটা হবে। কেনি আর মেনি আঙ্গুলের কাটা রক্তে ওর দু’হাত ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু সে নির্বিকার। একটা ধারালো চুরি হলে ভালোই হতো। কষ্টটা কম হতো। ও আঙ্গুল কাটার জন্য যেটা ব্যবহার করছে তাকে কিছুটা কাচির মত দেখা যায়। ওটার নাম কিআমার জানা নেই। আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি এসব বাস্তবেই হচ্ছে। ডান পা’টা খুব জোরে বুকের দিকে টেনে তুলে আমার ছাড়লাম। কিসের সাথে যেন পায়ের পাতা বাড়ি খেল। না স্বপ্ন নয়। চোখ তুলে তাকালাম তাঁর চোখের দিকে। কি সুন্দর চোখ ছিল ওর। ওর চোখের দিকে তাকালে আমি হারিয়ে যেতাম অজানায়। ভুলে যেতাম আমার অস্তিত্ব। ও চোখ দু'টি কেমন যেন ঘোলাটে। এই সময়ে ওর চোখ লাল হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ওর চোখ দুটোতে হালকা হলুদ কিংবা অচেনা এক কালারের আভা পড়েছে। ওর চুলগুলো ওর মুখের অর্ধেক ডেকে রেখেছে। ওর কয়টা চুল আমারমুখের ওপর। আমি যেন এখনো ওর চুলের মিষ্টি গন্ধটা পাচ্ছি। প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলাম আমি মনে হয় ওর মুখ থেকে চুলের দিকে বেশিতাকিয়েছিলাম। নড়ে উঠল সে। আমার দিকে ঘোলাটে চোখে তাকালো আবার। আমি ওর দিক থেকে মুখ সরিয়ে আমার কাটা আঙ্গুলের দিকে তাকালাম। এখনো রক্ত ঝরছে। তবে আমি কেন কাঁদছিনা আমি নিজেও জানিনা। তবে কি আমি মরে গেছি? মরলে ওকে কিভাবে দেখছি? নাকি সেও মরে গেছে। মনে হয় আমরা দু'জন পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও চলে এসেছি। যেখানে মানুষের কষ্ট বলে কিছু নেই। রক্ত ঝরলেও যেখানে মানুষ ব্যাথা পায়না। আর ভাবতে পারছিনা। আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। নাকি পাগল হয়ে গেছি। আমার তৃতীয় আঙ্গুলটাতে ও কাচির মত অস্ত্রটা বসাল। আমি হাতটা নড়াতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। চিৎকার করে উঠল মেয়েটা। শরীরের সব শক্তি দিয়ে আমার তৃতীয় আঙ্গুলে কাচির চাপ দিল। বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠলাম আমি। খুট করে একটা সুপারীকাটার মত শব্দ হল। পিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতো লাগল। ভাবতে লাগলাম আমি। বোধহয় বাকি দুটো আঙ্গুল ও কাটবে সে। কুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল মেয়েটা। এই পরিস্থিতিতে মেয়েটার কান্না পরিস্থিতিটাকে আরো জটিল করে তুলছে। না তাকে সাহস হারালে হবেনা। বাকি দু'টোআঙ্গুল এখনো বাকি। কিন্তু কি হল মেয়েটার। ও কেন থেমে গেল? সাহস বেড়ে গেল আমার। ধমক দিয়ে বললামকি কাটবেনা বাকি দুটো আঙ্গুল? কাটো তাড়াতাড়ি কাটো। আমাকে মুক্তি দাও। মেয়েটার লাশটাকে কবরে টেনে নামালাম। ওর শরীর থেকে তাজা রক্তের গন্ধ আমার নাকে লাগছে। খুব বেশি ভারী মনে হচ্ছে ওকে।এখনো আমার ডান হাতের কাটাআঙ্গুল থেকে রক্ত ঝরছে। কবরের উপর মাটি দেওয়ার জন্য কোদালটা খুঁজে পেলাম না। অথচ দুই ঘন্টা আগে কোদাল নিয়েই আমি এসেছিলাম। কবর খুঁটে তুলে এনছিলাম ওকে। আমার আঙ্গুলগুলো কি সে কেটেছিল? নাকি আমি? সে কিভাবে কাটলো? সে তো মৃত?আমি যদি কাটি তাহলে কাচিটা আসল কোথা থেকে? কিছুই মিলাতে পারলামনা। আঙ্গুলের ব্যাথাটা ক্রমেই বাড়তে থাকল। একসময় ঘেমে উঠলাম আমি। প্রচন্ড গরমে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। ঘড়ি দেখলাম। রাত সাড়ে এগারোটা। ঘুমিয়েছি সন্ধ্যা সাতটায়। কোনমতে কাপড় পড়ে রেডি হলাম। না ওকে ফেরাতেই হবে। আজ সকালে ও ফোন করেছিল। আমাকে বলেছে ওর শেষ কথা। ওর তান্ত্রিক সাধক সাত আঙ্গুলওয়ালা বাবা সাত আঙ্গুলওয়ালা ছেলে ছাড়া কারো কাছে বিয়ে দেবেনা তাকে। কি করবো আমি? ওকে পাওয়ার জন্য আমার তিনটি আঙ্গুলই কেটে ফেলব নাকি? মাথা ঠিক ছিলনা আমার। সকালে রাগ করে ওকে বলেছি আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য আমার তিনটি আঙ্গুল কেটে ফেলে দিতে পারবোনা।শুনে অনেক কাঁদল সে। রাগ করে বলল যদি তুমি তা না কর তাহলে আজি আমার মরা মুখ দেখবে। না তাকে ফেরাতেই হবে। ওকেপাওয়ার জন্য তিন আঙ্গুল কেন আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারব। পাগলের মত দোড়াচ্ছি তান্ত্রিক সাধকের জঙ্গলের বাড়ির দিকে।ভয়ঙ্কর রাত
লেখকঃ মাহি
ইদানীং এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে রকি। দিন-দুপুরে, রাতে- মোটকথা চোখে ঘুম এলেই স্বপ্নটা ওকে তাড়া করে বেড়ায়। যে কারণে রাতেঠিক মতন ঘুমতে পারছে না ও। ফলে দিন দিন কাহিল হয়েযাচ্ছে রকি। ভেঙে আসছে শরীর। সবাই শুনে হাসবে ভেবে কাউকে খুলেও বলতে পারছে না ও সমস্যাটার কথা। একদিন বিকেলে পরিচিত এক ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলো রকি। ডাক্তার ভদ্রলোক মন দিয়েই ওর কথা শুনতে লাগলেন। ‘অস্পস্টভাবে, আবছা আবছা দেখলাম আমি বাইরে থেকে বাসায় এসেছি।’ ঘটনাটা বলতে লাগলো রকি। দুঃস্বপ্নের ঘটনা,‘মনে হলো রাতের বেলা। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাচ্ছি। চারদিকে আলো-আঁধারীর খেলা। মাঝেমধ্যে কাউকে ডাকছি বলে মনে হলো। এবং যাকে ডাকছি তাকেই সম্ভবত খুঁজছি সারা ঘরময়। এ ঘর থেকে ও ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালাচ্ছি। একসময় রান্না ঘরে পৌছুলাম। এবং যা দেখলাম...’ থেমে গেলো রকি। বিভৎস কিছু কল্পনায় এসেছে বলে কথা আটকে গেছে ওর মুখে। ওকে অভয় দিলেন ডাক্তার,‘রিলেক্স রকি, ধৈর্য্যে নিয়ে বলতে থাকো।’ ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠল রকির। কাঁপাকাঁপা ঠোঁটেআবার শুরু করল ও,‘দেখি...দে-দেখি সারা কিচেন জুড়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বেসিনে টিপটিপ করে রক্তের ফোঁটা পড়ছে। আর...চুলোয় বিভৎস এক দৃশ্য। চুলোর উপর বসানো এক হাড়িতে সেদ্ধ হচ্ছে কারো ছিন্নমুন্ডু! আরো জনাদুয়েকের কাটামাথা গড়াগড়ি খাচ্ছে ফোরে...উফ্!’ বলতে বলতে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো রকি। ওকে শান্ত্বনা দিলেন ডাক্তার সাহেব। তারপর প্রাথমিক কিছু টেস্ট সেরে একটা প্রেসক্রিপসন লিখে দিলেন তিনি। বললেন, দিন পাঁচেক ট্রাই করে দেখতে। প্রেসক্রিপসন হাতে ডাক্তারের চেম্বার ছাড়ল রকি। নিকটস্থ এক ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে বাসায় ফিরলো। এবং তারপরের দিন ঘটল আসল ঘটনা। গভীর রাতে ঘুম ভাঙলো রকির। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে গেছে। কপালের ঘাম মুখ বেয়ে নামছে রেখা টেনেটেনে। হাঁপাচ্ছে ও হাপরের মতন। যেন হিস্টিরিয়া রোগী শ্বাস কষ্ঠে ভুগছে প্রচন্ড। বেড সুইচ টিপে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালালো রকি। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। প্রতিদিনের মতন আজও সেই একই দুঃস্বপ্ন দেখেছে ও। তবে আজ স্বপ্নেএকটু অন্যরকম ছাপ এসেছে। সেই ছিন্নমুন্ডুগুলোকে শনাক্ত করতে পেরেছে রকি। মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর, স্বপ্নের মধ্যেই। ওগুলো ওর পরিবারের মুন্ডু ছিলো! ওর ছোটভাই, বড় বোন আর মা’র। অসহ্য! হঠাৎ কিছু একটা ভেবে পাশের ঘরে এল রকি। এ ঘরে ওর মা আর ছোটবোন ঘুমোয়। কিন্তু অন্ধকার ঘরে কিছুই নজরে এল না। লাগোয়াঘরটা বড়ভাই হাফিজের। ও ঘরে গিয়েও কিছুই দেখতে পেল না রকি। অথচ সবকিছুই কেমন জানি ঠেকছে ওর কাছে।মনে হচ্ছে স্বপ্নের মাঝেই ঘটছে এসব। আসলে হয়তঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি। ধীর পায়ে ঠলতে ঠলতে কিচেনের দিকে এগোলো রকি। ঠিক তখুনী ওর মনে হল কেউ একজন ওকে অনুসরণ করছে। ঝট্ করে চারদিকে নজর ঢাললও, নাহ্! কেউ নেই! অল্প অল্প কিচেনের সামনে আসতে লাগলো ও। কিচেনে বাতি জ্বলছে। সেই আলার মধ্যে রকি হতবাক হয়ে ল্য করল কিচেনের ফোর জুড়ে টকটকে লাল তরল পদার্থের বন্যা! এতো হুবুহু স্বপ্নে দেখা ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটছে! অজান্তেই আতঙ্কিত চিৎকারের আওয়াজ বেরিয়ে আসছিলো রকির মুখ দিয়ে। চটকরে মুখে হাত চাপা দিল ও। আরো কয়েক কদম এগোতেই স্টোভ থেকে স্পস্ট ফুটন্ত পানির শব্দ কানে ভেসে এল। জায়েগায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল রকি! স্বপ্নটা, স্বপ্নটা কি তবে সত্যি হতে চলেছে! বিড়বিড় করে উঠল রকি। এমন সময় পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাসের শব্দ স্পস্ট অনুভব করল ও। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে ততণে...! পুরো মহল্লায় প্রচন্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে ভীষণ গুঞ্জন। একটি বাসার সামনে বেশ ক’টা পুলিশের গাড়ি। আর পুলিশ ও সাংবাদিকদের ছুটোছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। সীল কওে দেয়া হচ্ছে পুরো বাসা। উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভীড়সামলাতে পুলিশের নাজেহালঅবস্থা। সেই ভীড়ের মাঝে ঘটনা কি কেউ একজন জানতে চাইল। এবংজবাবও দিল কেউ একজন,‘গতরাতে চারটি খুন হয়েছে ভাই্ চারজন মানুষের মুন্ডুহীন লাশ পাওয়া গেছে এ বাসায়...