মাঝ রাতের দিকে রানুর ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
তার মনে হল ছাদে কে যেন হাটছে ।সাধারন মানুষের হাটা নয় ,পা টেনে টেনে হাটা ।সে ভয়ার্ত গলায় ডাকলো-এই এই ।আনিসের ঘুম ভাঙ্গলো না ।বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে ।অল্প অল্প বাতাস ।বাতাসে জাম গাছের পাতায় অদ্ভূত এক রকমের শব্দ হচ্ছে ।রানু আবার ডাকলো-এই উঠোনা ।এই ।
◆কি হয়েছে ?
◆কে যেন ছাদে হাটছে ।
◆কি যে বল ।কে আবার ছাদে হাটবে ।ঘুমাও তো ।
◆প্লীজ একটু উঠোনা ।আমার বড় ভয় লাগছে ।
আনিস উঠে বসলো ।প্রবল বর্ষন শুরু হল এসময় ।ঝম ঝম করে বৃষ্টি ।জানালার পর্দা বাতাসে পত পত করে উড়তে লাগল ।রানু হঠাত্ দেখল জানালার শিক ধরে খালি গায়ে একটা রোগামত মানুষ দাড়িয়ে আছে ।মানুষ্টির দুটি হাতই অসম্বব লম্বা ।রানু ফিস ফিস করে বলল-ওখানে কে ?
◆কোথায় কে ?
◆ঐ যে জানালায় ।
◆আহ্ কিযে ঝামেলা কর ।ওটা নারিকেল গাছে ছায়া পড়েছে ।
◆একটু বাতিটা জালাও না !
◆রানু তুমি ঘুমোও তো ।
আনিস শোবার উপক্রম করতে ছাদে কয়েকবার থপ থপ করে আওয়াজ হল ।কেও ছাদে লাফাচ্ছে ।
রানু চমকে উঠে বলল-কিসের শব্দ হচ্ছে ?
◆বানর ।এই জায়গায় বানর আছে ।কালইতো দেখলে ছাদে লাফালাফি করছিলো ।
◆আমার বড় ভয় করছে ।একটু উঠে গিয়ে বাতিটা জ্বালাও না ।পায়ে পড়ি তোমার ।
আনিস বাঁতি জ্বালাল ।ঘড়িতে বাঁজে দেড়টা ।ছাদে আর কোন শব্দ হচ্ছেনা ।তবু রানুর ভয় কমলোনা ।সে কেপে কেপে উঠতে লাগল ।আনিস বিরক্ত স্বরে বলল-এরকম করছ কেন ?
◆কেন জানি অন্য রকম লাগছে আমার ।একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি ।
◆কি স্বপ্ন ?
◆দেখলাম আমি যেন .....
কথার মাঝেই রানু থেমে গেল ।কে যেন হাসছে ।ভারী গলায় হাসছে ।রানু কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল___
◆ হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছ ? কে যেন হাসছে ।
◆কে আবার হাসবে বানরের শব্দ ।কিংবা কেউ হয়তো জেগে উঠেছে দোতলায় ।
আনিস লক্ষ করল রানু খুব ঘামছে ।চোখ মুখ রক্ত শুন্য ।আনিস বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল ।দেশলাই জ্বালাতে জ্বালাতে বলল- কি স্বপ্ন দেখেছিলে ?
◆দিনের বেলা বলবো ।
◆কি যে কুসংস্কার তোমাদের ।এখনো ভয় লাগছে ?
◆হ্যা ।
◆ঠিক আছে ।বাতি জ্বালানোই থাক ।বাতি জ্বালিয়েই ঘুমাব আছ ।এখন বল কি স্বপ্ন দেখলে ।
◆দিনের বেলা বলব ।
◆আহ্ বলোনা ।বললেই ভয় কেটে যাবে ।
রানু আনিসের বা হাত শক্ত করে চেপে ধরল ।থেমে থেমে বলল -দেখলাম ।একটা ঘরে আমি শুয়ে আছি ।একটা বেটে লোক এসে ঢুকলো ।তারপর দেখলাম সে আমার শাড়ি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করছে ।
আনিস শব্দ করে হাসলো ।
রানু বললঃ হাসছ কেন ?
◆ হাসবো না ?এটা কি একটা ভয় পাওয়ার স্বপ্ন ?
◆তুমি তো সবটা শোনো নি ।
◆শুনতে হবে না ।পরে কি হবে সেটা আমার জানা ।তুমি যা দেখেছো তা হচ্ছে একটা সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি ।যুবক যুবতীয়া এরকম প্রায়ই দেখে ।
◆আমি দেখি না ।
◆তুমিও দেখো ।মনে থাকেনা তোমার ।
◆আমি স্বপ্ন খুব কম দেখি ।যা দেখি তা সব সত্যি হয় ।তোমাকে আগেও অনেকবার বলেছি ।
আনিস চুপ করে রইল ।রানু এই কথাটি প্রায়ই বলে ।বিয়ের রাতে প্রথম বার বলেছিল ।আনিস সে বারও হেসেছে ।রানু অবাক হয়ে বলেছে-আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেনা না ,না ?
◆নাহ্ ।
◆আমি আপনার গা ছুঁয়ে বলছি বিশ্বাস করুন আমার কথা ।
তারপর থেমে ফিস ফিস করে বললো-আপনার সঙ্গে যে আমার বিয়ে হবে সেটাও আমি জানতাম ।
◆এটাও স্বপ্নে দেখেছিলে ?
◆হু ।দেখলাম একটা লোক খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে ।তার পেটের কাছে একটা মস্ত কাঁটা দাগ । লোকটিকে দেখেই মনে হল এরসাথে আমার বিয়ে হবে ।আমি তাকে বললামঃ কেটেছে কি করে ?লোকটি বললঃ সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম ।
আনিস সে রাতে দীর্ঘখন কথা বলতে পারেনি ।তার পেটে একটা কাটা দাগ সত্যি সত্যি আছে ।এ মেয়ের সেটা জানার কথা নয় ।তবে সাইকেল থেকে পড়ে কাটেনি ।কেটেছে জামগাছ থেকে পিছলে পড়ে ।ব্যাপারটা কাকতালীয় বলাই বাহুল্য ।মাঝে মাঝে দু একটা জিনিস খুব মিলে যায় ।তবুও কোথায় যেন একটা ক্ষীণ অস্বস্তি থাকে ।
◆ ◆ ◆ ◆ ◆ ◆ ◆ ◆ ◆ ◆
বাইরে বৃষ্টি খুব বাড়ছে ।ঝড়টড় হবে বোধহয় । শো শো আওয়াজ হচ্ছে জানালায় ।একটি কাচ ভাঙা ।প্রচুর পানি আসছে ভাঙা জানালা দিয় ,শীত শীত করছে ।
◆রানু চল ঘুমিয়ে পড়ি ।
◆সিগারেট শেষ হয়েছে ?
◆হ্যা ।
বিছানায় উঠা মাত্র প্রবল শব্দে বিদ্যুত্ চমকালো ।বাতি চলে গেলো সঙ্গে সঙ্গে ।
আনিস বললো-ভয় লাগছে রানু ?
◆হ্যা ।
◆আচ্ছা ।হাসির গল্পটল্প কর ।এতে ভয় কমে যায় ।বলো একটা গল্প ।
◆তুমি বল ।
আনিস দীর্ঘ সময় নিয়ে একজন পাদ্রী ও তিনটি ইহুদী মেয়ের গল্প বললো ।গল্পের এক পর্যায়ে শ্রোতাকে জিজ্ঞেস করতে হয়-পাদ্রী তখন
কি করল ?
এর উত্তরটি পাঞ্চ লাইন ।কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করলনা রানু ।